ePaper

সবুজ শ্যামলে ঢেকে গেছে তিস্তার ধূ-ধূ বালুর চর

লিয়াকত আলী, লালমনিরহাট

নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট। সেই নদীগুলোয় পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। জেগে ওঠা চরগুলো এখন সবুজে ঢাকা। জানা গেছে, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাঁও, পঞ্চগর ও রংপুর বেষ্টিত তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সতি, মরাসতি, গিদারী, ব্রম্মপুত্রসহ এ অঞ্চলের ৫৭ টি নদীতে জেগে ওঠা চরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতে করে নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা কমলেও জেগে ওঠা হাজার হাজার চরে এখন বিভিন্ন ফসলের সংখ্যাও বাড়ছে। কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে। তবে ৫৭ টি নদীর কয়েক হাজার হেক্টর জেগে ওঠা চরের জমিতে যে পরিমাণ ভুট্টা চাষাবাদ বেড়েছে তা স্হানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবারাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চরের জমিতে আলু, পিয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রকম মসলা জাতীয় ফসল ও শাকসবজি চাষাবাদ হচ্ছে। জেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, তিস্তা বেষ্টিত এ জেলায় ২১ টি ইউনিয়নের জেগে ওঠা চর সবই চাষাবাদ যোগ্য। চলতি মৌসুমে এসব চরে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে যা গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি বেশি। চর অঞ্চল গুলো ঘুরে দেখা যায়, তিস্তা ও ধরলাসহ সংশ্লিষ্ট নদীর জেগে থাকা চরে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন ভুট্টা, আলু, রসুন, পিয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, লালশাকসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল ও নানা ধরনের রবিশস্য। পাশাপাশি গম, সরিষা, মসুর ডাল, ছোলা ও বাদাম। চর অঞ্চলের কৃষকরা জানায়, সারা বছর জেগে ওঠা চরের জমিতে ২০ থেকে ২৫ ধরনের ফসল চাষাবাদ করা হয়। বন্যার পর জেগে ওঠা চরে পলি জমে থাকায় সারের পরিমাণ কম লাগে ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম থাকে এবং কীটনাশকের ব্যবহার লাগেই না। তাই ফসল উৎপাদনে ব্যয় অনেকটা কম হয়। চরের কৃষক আবুল কালাম (৪৮) জানান, প্রায় ৫ একর জমিতে আলু, ভুট্টা ও শাকসবজিসহ ফসল চাষাবাদ করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে আর ভালো ভাবে যদি ফসল ঘরে তুলতে পারি তাহলে গত বন্যায় যে পরিমাণে ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা পুষিয়ে যাবে। কৃষক সোলায়মান (৫২) জানান, তিস্তা নদীর বন্যা আর ভাঙনে আমরা প্রতি বছর অনেক ক্ষতির মূখে পড়ে থাকি। পানি শুকিয়ে চর জাগলে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি। আমি কয়েক একর জমিতে আলুসহ অন্যান্য ফসল লাগিয়েছি। যদি বাজার দর ভালো থাকে আর কোন ধরনের বিপদ না আসে তাহলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। কৃষক জব্বার মিয়া (৪২) জানান, এই সময়ে তিস্তার জেগে ওঠা চরে আমরা কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। নদীর পানি নেমে গেলে সামান্য খরচে ফসল ঘরে তুলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা পূরণ করে নেই। আমি ৪৯ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়া ৩২ শতক জমিতে লালশাক ৫৬ শতক জমিতে আগুর ভুট্টা চাষাবাদ করেছি। জমিতে পলি জমে থাকার কারণে খরচ নেই বললে চলে। তবে অসংখ্য চরে পরিবেশ ধংসকারী তামাক চাষের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। কৃষকরা জানান, এসব চরে, পিঁয়াজ, রসুন ও মরিচ চাষাবাদ করলে ফলন ভালো হয়। তাই দেশের পিঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে কৃষকদের বীজসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হলে চর অঞ্চল থেকে পিঁয়াজ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে তারা জানান। কৃষকরা আরও জানান, নদী গুলো খনন করা হলে হাজার হাজার আবাদী জমি জেগে ওঠবে। সে জমি গুলোতে আবাদ করা হলে দেশে বিভিন্ন খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে আয় করা সম্ভব হবে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের কারণে বদলে গেছে চরের দৃশ্যপট। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গত বছরের চেয়ে এবছর অনেক চাষাবাদ বেড়েছে চর অঞ্চলে। প্রতি বছর উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক হারে ক্ষতি স্বাদিত হয়। তাই চর অঞ্চলের সব চাষিদের সরকারের প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *